ঢাকা মেট্রোরেলের ইলেকট্রনিক কার্ড ব্যবহার করে অভিনব কৌশলে চলছিল ভাড়া জালিয়াতি। এক সংঘবদ্ধ চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত করায় লাখ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়ে Dhaka Mass Transit Company Limited (ডিএমটিসিএল)। বিষয়টি ধরা পড়ার পর ২০ অক্টোবর থেকে বন্ধ করা হয়েছে ‘একই স্টেশনে বিনা ভাড়ায় এন্ট্রি-এক্সিট’ সুবিধা।
ডিএমটিসিএল জানায়, প্রতারক চক্র দুটি দলে ভাগ হয়ে কাজ করত।
একজন কার্ড স্ক্যান করে স্টেশনে ঢুকত, পরে কার্ডটি স্টেশনের ভেতরেই সঙ্গীকে দিয়ে দিত। সেই সঙ্গী একই কার্ড দিয়ে বেরিয়ে যেত। ফলে সিস্টেমে দেখাত— যাত্রী ঢুকেছে ও বেরিয়েছে একই স্টেশনে।
এইভাবে প্রকৃত যাত্রী ট্রেনে উঠে গন্তব্যে চলে যেত বিনা ভাড়ায়। ডিএমটিসিএলের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ১০টিরও বেশি এমন ঘটনার প্রমাণ মিলেছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে তারা মনে করছেন।
তাই কর্তৃপক্ষ সোমবার (২০ অক্টোবর) থেকে ‘একই স্টেশনে বিনা ভাড়ায় এন্ট্রি-এক্সিট’ সুবিধা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে কেউ একই স্টেশনে ঢুকে বের হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১০০ টাকা ভাড়া কেটে নেওয়া হবে, এমন বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু নতুন এই নিয়ম সাধারণ যাত্রীদের জন্য বিশেষ ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাত্রীরা বলছেন— ভুলবশত কার্ড স্ক্যান হয়ে ঢুকতে হতে পারে বা জরুরি প্রয়োজনে সেই স্টেশনেই ফিরে আসতে হতে পারে, কিন্তু এখন ১০০ টাকার জরিমানা ঝুঁকি নিয়ে চলতে হবে।
এক যাত্রী বলেছেন, “মাথা ব্যথা হলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে, ওষুধ দিতে হবে। কিন্তু মাথা কেটে সমস্যার সমাধান হয় না।” অর্থাৎ যাত্রীদের দাবি— অসাধু চক্রগুলোর কারণে কোনো সুবিধা বন্ধ করা হলেও যুক্তিসঙ্গতভাবে সাধারণ মানুষের ওপর একেবারে জরিমানা চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়।
ডিএমটিসিএলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছে, “আমরা মানুষের সুবিধার জন্য এন্ট্রি-এক্সিট সুবিধা দিয়েছিলাম। কিন্তু মানুষ যখন সেটার অপব্যবহার করতে শুরু করেছে, তখন আর কিছু করার থাকে না।”
বিশ্লেষণ ও পক্ষপাতমূলক চ্যালেঞ্জ
যাত্রীদের মূলত অভিযোগ অপব্যবহারকারীদের কারণে সাধারণ যাত্রীদের ওপর জরিমানার ভীতি আরোপ করা হয়েছে। তারা চান— টেকনিক্যাল বা নজরদারি পদ্ধতির মাধ্যমে সমস্যার উৎস চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
কর্তৃপক্ষের যুক্তি হলো, ভাড়া ফাঁকি প্রতিরোধে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, কারণ প্রতিদিন গড়ে আড়াই লাখেরও বেশি যাত্রী মেট্রোরেল ব্যবহার করেন ও সব ধরণের অনিয়ম শনাক্ত করা সাধারণ পদ্ধতিতে কঠিন।
তবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যাত্রীসেবা ও আপডেট যোগাযোগের ঘাটতি দেখা দিয়েছে— বেশ কয়েকটি স্টেশনের কর্মী জানান, নতুন নিয়ম সম্পর্কে তাদের জানা ছিল না, অফিসিয়ালি তৎক্ষণাৎ নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।