Shopping cart

The info networks, your trusted source for insights and information for diverse topics and insights. We cover it all to keep you informed and inspired. Explore, learn, and stay curious with us!

  • Home
  • Business
  • আগামী ৮ বছরের মধ্যে গ্যাসশূন্য হতে পারে বাংলাদেশ, কমছে মজুত বাড়ছে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি
Business
আগামী ৮ বছরের মধ্যে গ্যাসশূন্য হতে পারে বাংলাদেশ, কমছে মজুত বাড়ছে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি
Email :149

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুত দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। দেশের শিল্পখাত, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও গৃহস্থালি খাতে গ্যাস সরবরাহ সংকট দিন দিন গভীরতর হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণে সরকার ক্রমেই নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে ব্যয়বহুল এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানির ওপর।

৮ বছরের মধ্যেই ফুরিয়ে যেতে পারে স্থানীয় গ্যাস সরবরাহ

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার না হলে বা অব্যবহৃত ক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন শুরু না হলে, আগামী আট বছরের মধ্যে বাংলাদেশে স্থানীয় গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ ফুরিয়ে যেতে পারে।

পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, দেশে এখন পর্যন্ত ২৯.৭৪ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুতের মধ্যে ২১.০৮ টিসিএফ ইতিমধ্যেই উত্তোলন হয়েছে। ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অবশিষ্ট ছিল মাত্র ৮.৬৬ টিসিএফ।

বর্তমানে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে দৈনিক উৎপাদন নেমে এসেছে প্রায় ১,৮০০ এমএমসিএফডি, যা ২০১৭ সালে ছিল ২,৭০০ এমএমসিএফডি। অর্থাৎ, উৎপাদন কমেছে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান বলেন, “দেশীয় উৎপাদন কমছে, অথচ সব খাতে চাহিদা বাড়ছে। তাই এলএনজি আমদানি বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই।”

২০২৫ সালে রেকর্ড এলএনজি আমদানি

২০২৫ সালে বাংলাদেশে এলএনজি আমদানি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আরপিজিসিএল (RPGCL) স্পট মার্কেট থেকে ৩৫টি এলএনজি কার্গো আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ২১টি।

শুধু আগস্ট মাসেই প্রতিষ্ঠানটি ৩,৪২৭ এমএমসিএফ এলএনজি কিনেছে—যা আগের বছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি।

এ বছর পেট্রোবাংলা ১০৮টি কার্গো আমদানির পরিকল্পনা করেছে, যার মধ্যে ৫৬টি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় এবং বাকি ৫২টি স্পট মার্কেট থেকে আনতে হবে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ১১৫টি কার্গো আমদানিতে ব্যয় হবে প্রায় ৫৮০ বিলিয়ন টাকা।

গ্যাস ভর্তুকির বোঝা আরও বাড়ছে

উচ্চ আমদানি মূল্যের কারণে সরকারের ভর্তুকির বোঝা বাড়ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮,৯০০ কোটি টাকা গ্যাস ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, যা আগের বছরে ছিল ৬,০০০ কোটি টাকা।

দেশীয় গ্যাসে প্রতি ঘনমিটারের খরচ ৩ টাকা, কিন্তু আমদানিকৃত এলএনজির দাম ৫৫ টাকা পর্যন্ত। ফলে, পেট্রোবাংলার গড় ব্যয় ১৯.০৯ টাকা হলেও বিক্রয়মূল্য ১১.৯১ টাকা—অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটারে ৭.১৮ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।

দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাস

তিতাস, বিবিয়ানা ও রশীদপুরের মতো প্রধান গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে চাপ ক্রমাগত কমছে। ২০২৫ সালের জুন নাগাদ দেশীয় উৎপাদন নেমে এসেছে ১,৮৫০ এমএমসিএফডি-তে।

মজুত কমে যাওয়া, বিনিয়োগের অভাব এবং অনুসন্ধানে ধীরগতি—এই তিন কারণেই উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট গ্যাস বিতরণ কমে ২,৫২৬ এমএমসিএফডিতে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছর ছিল ২,৭১৫ এমএমসিএফডি।

বাপেক্সের অর্থ সংকট ও অনুসন্ধানে ধীরগতি

বাংলাদেশে বর্তমানে ২৯টি গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে ২০টি সক্রিয়। কিন্তু গত এক দশকে নতুন কোনো বড় গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়নি। সর্বশেষ বড় আবিষ্কার ছিল ১৯৯৮ সালে বিবিয়ানা ক্ষেত্র, আর ২০২১ সালে ছোট আকারের জকিগঞ্জ ক্ষেত্র।

রাষ্ট্রায়ত্ত বাপেক্স (BAPEX) দীর্ঘদিন ধরে অর্থ সংকটে ভুগছে। প্রায় ৪০০ কোটি টাকার একটি নতুন ড্রিলিং রিগ কেনার পরিকল্পনা বছরের পর বছর ঝুলে আছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম বলেন, “বাপেক্সকে ইচ্ছাকৃতভাবে দুর্বল রাখা হয়েছে যাতে বিদেশি কোম্পানিগুলো সুযোগ পায়। যদি সরকার সত্যিকারের জ্বালানি নিরাপত্তা চায়, তবে দেশীয় অনুসন্ধানে বিনিয়োগ বাড়াতেই হবে।”

শিল্পখাত চরম চাপে

বর্তমানে দেশের শিল্পখাত গ্যাস ঘাটতির চরম চাপের মুখে রয়েছে। অনেক কারখানা তাদের চাহিদার দুই-তৃতীয়াংশেরও কম গ্যাস পাচ্ছে।২০২৪-২৫ অর্থবছরে শিল্প খাতে গ্যাসের চাহিদা ছিল ৯৭৬ এমএমসিএফডি, কিন্তু সরবরাহ ছিল মাত্র ৫৬০-৬০০ এমএমসিএফডি।দেশে প্রতিদিন মোট গ্যাস চাহিদা ৪ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফডি) ছাড়িয়ে গেছে, অথচ স্থানীয় উৎপাদন ২.৭ বিসিএফডির নিচে নেমে এসেছে।

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে শিল্পখাতে গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল, এবং ২০২৫ সালে নতুন সংযোগে আরও ৩৩ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস সংকট এখন জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তার বড় হুমকি। দ্রুত অনুসন্ধান, কার্যকর বিনিয়োগ, এবং দেশীয় উৎপাদন পুনরুদ্ধার না হলে আগামী দশকের মধ্যে গ্যাস আমদানিনির্ভর অর্থনীতি দেশকে আরও বড় আর্থিক চাপে ফেলবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই বাপেক্স ও পেট্রোবাংলাকে শক্তিশালী করে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যতে জ্বালানি খাতে গভীর সঙ্কট অনিবার্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts